সৈয়দ বোরহান কবীর :
৫২-তে পা রাখল অপরাজেয় বাংলাদেশ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। প্রাণের সোনার বাংলা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল বিশ্বের বিস্ময়। জাতির পিতা একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন ১৯৪৭ সালে। বেকার হোস্টেলে। তারপর স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিল তিল করে জনগণকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। হাসিমুখে বরণ করেছিলেন জেল-জুলুমসহ সব নিপীড়ন-নির্যাতন। জাতির পিতাই যেন বাংলাদেশ। তার ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন আর বাঙালির ওপর পাকিস্তানিদের শোষণ-বঞ্চনা একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগিয়েছেন একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা থেকে। ’৬৬-তে ছয় দফাকে অনেকে অবাস্তব রাজনৈতিক অভিলাষ মনে করেছিলেন। জনগণ ছাড়া কেউ তাঁর পক্ষে ছিল না। এমনকি তাঁর প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগেরও বড় নেতাদের অনেকের সায় ছিল না ছয় দফায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তরুণদের নিয়েই জাগরণের গান গেয়েছেন। বৈষ্যম্যের চিত্র তুলে ধরে পাকিস্তানিদের সামনে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন- সোনার বাংলা শ্মশান কেন? বাংলাদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই তা বোঝাতে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ছুটে বেরিয়েছেন। আগরতলা মামলায় যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তখনো পণ্ডিতরা শেখ মুজিবের শেষ দেখেছিলেন। আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির যবনিকার প্রহর গুনেছিলেন। যখন শেখ মুুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে গোলটেবিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তখনো আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই আপসের পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব একাই আপসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান। তাঁর দৃঢ়তা, অনমনীয়তার জন্যই শেখ মুুজিব হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতায় তিনি যে ইতিহাসের সর্বকালের সেরা রাজনীতিবিদ তা প্রত্যক্ষ করা যায় ’৬৯ থেকে ’৭১-এর ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপে। তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী হননি। ’৭০-এর নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে পাকিস্তানি জান্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কী চান, বাংলার মানুষ কী চায়। এরপর পাকিস্তানিদের টালবাহানা, ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি বাংলাদেশের জনগণকে মুক্তির মোহনায় দাঁড় করায়। ’৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নৃশংসতম গণহত্যা চালায়। তারা মনে করেছিল নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে হয়তো বাঙালি জাতিকে চিরতরে স্তব্ধ করা যাবে। কিন্তু পাকিস্তানি দানবরা শেখ মুজিবের সম্মোহনী রাজনৈতিক শক্তি বিবেচনায় নেয়নি। ’৭০-এর নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয়ের মুহূর্ত থেকেই বঙ্গবন্ধু তাঁর যুদ্ধকৌশল প্রস্তুত করেছিলেন। কীভাবে যুদ্ধ করতে হবে, ভারতের সহযোগিতা প্রাপ্তি এবং জনযুদ্ধের রূপরেখা তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ ভাষণে বঙ্গবন্ধুর যুদ্ধকৌশলের মৌলিক দিগ্দর্শন জাতির উদ্দেশে উপস্থাপন করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলুন এবং আমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন।’ এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে-ঘরে দুর্গ করে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে…।’ মূলত ’৭০-এর নির্বাচনের পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর কর্তৃত্বেই চলে যায় গোটা বাংলাদেশ। আর এ কারণেই কৃষক, মজুর, শ্রমিক, ছাত্র, তরুণরা লুঙ্গি-গামছা পরে রুখে দেয় বিশে^র অন্যতম সেরা সশস্ত্র বাহিনীকে। জাতির পিতা এক স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেন বাঙালি জাতিকে। এ স্বাধীনতা অনেক রক্তে কেনা। ১৯৪৭ সালে কজন ভেবেছিল বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে জায়গা করে নেবে? ২৫ মার্চের পর কজন বোদ্ধা বুঝেছিলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাংলার দামাল সন্তানরা মুজিবের বাংলাকে মুক্ত করবে? বিশে^র বড় দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তাতে কি? জীবন তুচ্ছ করে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। জাতির পিতা বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী হয়েছে বাঙালি জাতি। জাতির পিতা আমাদের দিয়েছেন আত্মপরিচয়, ভূখণ্ড, পতাকা।
জাতির পিতার স্বপ্নের দুটি ভাগ ছিল। প্রথম ভাগ ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। দ্বিতীয় ভাগ একটি মর্যাদাবান, স্বনির্ভর, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক সুখী জাতিরাষ্ট্র। এক স্বনির্ভর বাংলাদেশ। ’৭৫-এর আগ পর্যন্ত তেমন একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যেই কাজ করছিলেন জাতির পিতা। কিন্তু ’৭১-এর পরাজিত শক্তি স্বাধীনতার পর নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে। তার চূড়ান্ত রূপ হলো ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট। ইতিহাসের ওই জঘন্যতম ঘটনার পর পথ হারায় বাংলাদেশ। হতাশা-ব্যর্থতার কালো মেঘ ছেয়ে ফেলে বাংলার আকাশ। বাংলাদেশ এক স্বপ্নহীন, হতদরিদ্র, ভিক্ষুক রাষ্ট্র হিসেবেই বিশ্বে পরিচিতি পেতে থাকে। হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ যেন বাংলাদেশের নিয়তি। ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ, দরিদ্রই যেন বাংলাদেশের গন্তব্য। বুটের তলায় গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার পিষ্ট করে স্বৈরাচার দানবরা বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর এক পৈশাচিক খেলায় মেতেছিল। আশাহীন, দিশাহীন বাংলাদেশ।
সেখান থেকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প রূপকথাকেও হার মানায়। আর সে রূপকথার নায়ক শেখ হাসিনা। শেখ মুজিব যেমন ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়েছেন, তেমনি শেখ হাসিনাও ধাপে ধাপে জননেত্রী থেকে রাষ্ট্রনায়ক। রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনেতা হয়ে উঠেছেন। জাতির পিতা বাংলাদেশের স্থপতি। তিনি বাংলাদেশের রূপকল্প এঁকেছেন। আর জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুনিপুণ নির্মাতা হলেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলো হৃদয়ে ধারণ করেছেন। ওই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। আর তাই বাংলাদেশ আজ বিশে^র বিস্ময়। উন্নয়নের রোল মডেল। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার ক্লান্তিহীন পরিশ্রম আর অসাধারণ নেতৃত্বের কারণে।
বাংলাদেশের সৌভাগ্য ৫২ বছর বয়সী এ দেশটি দুজন অসামান্য নেতা পেয়েছেন। তাঁদের সময় যাঁরা বিশে^র সেরা নেতা হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা থেকে এ পর্যন্ত দুজন নেতার হাত ধরে এসেছে। একটি রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য যেমন এমন একজন নেতা লাগে, যিনি সময়ের থেকে এগিয়ে। যিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পান চোখের সামনে। যাঁকে জনগণ বিশ্বাস করে। শ্রদ্ধা করে। ভালোবাসে। তেমন নেতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। একইভাবে একটি জাতিরাষ্ট্রের বিকাশ, উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রায় একজন নেতা লাগে। যে নেতা মানুষকে স্বপ্ন দেখান। সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। যিনি সাহসী। আত্মপ্রত্যয়ী। জনগণ যাঁকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে। এ রকম একজন নেতা হলেন শেখ হাসিনা। বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। ২০০৮ সালের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য দেখলেই বোঝা যায় শেখ হাসিনা কীভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। কীভাবে আত্মমর্যাদাবান একটি জাতি গড়ে তুলেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনার যুদ্ধটা এখনো শেষ হয়নি। ’৭১-এ জাতির পিতা বিজয়ী হয়েছিলেন। এ বিজয় ছিল ঘরে বাইরে নানা প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার পরও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছিল। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালকে কলঙ্কিত করার কোনো অপচেষ্টাই বাদ যায়নি। বাসন্তীর জাল পরানোর কুৎসিত মিথ্যাচার থেকে শুরু করে হত্যা, অগ্নিসংযোগের কাপুরুষোচিত ঘটনা- সব অপচেষ্টাই হয়েছে। গণবাহিনী আর সর্বহারাদের ন্যক্কারজনক তৎপরতা থেকে পাটের গুদামে আগুন সবকিছুই হয়েছে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। এসব আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী অপতৎরতা ছিল না। এসব আসলে ছিল বাংলাদেশবিনাশী ষড়যন্ত্রের অংশ।
আজ যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তখন সেই পুরনো ষড়যন্ত্রই নতুন করে দেখছি। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আবার সেই পুরনো খেলা খেলছে। এত অর্জন, এত প্রাপ্তির পরও কারা যেন হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলার বাতাসে। জাতির পিতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল চারদিক থেকে। প্রথমত, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা জ্বালাও-পোড়াও, লুটরাজ, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা খুনি মোশতাকরা কিছু কিছু কর্মকাণ্ডে সরকারকে বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিল। তৃতীয়ত, সুশীল নিয়ন্ত্রিত গণকণ্ঠ, হলিডে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারে মেতে ছিল। চতুর্থত, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রের জাল ফেলা হয়েছিল। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিল এ চতুর্মুখী অপতৎপরতার ফল। আজকে বাংলাদেশে দেখি একই চতুর্মুখী চক্রান্ত। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে নেই। নির্বাচনের রাস্তায়ও হাঁটছে না। বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিতর্কিত করতেই যেন মরিয়া বিরোধী দলগুলো। সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যাচারের পসার বসিয়েছে। জঙ্গি, উগ্রবাদী রাজনৈতিক দলগুলোকে উসকে দিচ্ছে নাশকতার জন্য। গত বছর এই ২৬ মার্চ হেফাজতের তাণ্ডব, পূজামণ্ডপে হামলার মতো ঘটনাগুলো ঠিক যেন ’৭২ থেকে ’৭৫-এর প্রতিরূপ। ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় ভাগটি আওয়ামী লীগের ভিতরেই। হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগের অত্যাচারে আজ অতিষ্ঠ আওয়ামী লীগই। কিছু কিছু মন্ত্রী-মেয়র এমনভাবে কথাবার্তা বলেন যেন তাঁরা ভিনগ্রহ থেকে এসেছেন। এঁদের দায়িত্বহীন, অসংলগ্ন কথাবার্তা জনবিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এঁরা সরকারের সব অর্জন ম্লান করে দিতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এঁরা বোধহয় অযোগ্য, অথর্ব। কিন্তু একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এঁরা আসলে একেকটা মোশতাক। সরকারকে অপ্রিয় করতে এঁদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। কোথাও কোথাও এসব হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বটে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এঁরা সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। তৃতীয় ভাগে আছেন আমাদের পরম পূজনীয় সুশীলগণ। বাংলাদেশের অর্জনে, অগ্রযাত্রায় যেন এঁদের হৃদয় ভাঙে। মাথাপিছু আয় বাড়া, গড় আয়ু বৃদ্ধি, অর্থনীতিতে স্বস্তি- এসব আমাদের সুশীলদের ভালো লাগে না। টিসিবির লাইন কত দীর্ঘ, কারা সেখানে গেল তা নিয়ে গবেষণায় আমাদের সুশীলদের আগ্রহের কমতি নেই। গুম নিয়ে আমাদের সুশীলদের ঘুম নেই। সুশীলদের কথাবার্তায় মনে হয় গুমই যেন দেশের প্রধান সমস্যা। শেখ হাসিনা যখন শতভাগ বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেন সারা দেশে তখন তাঁকে একটা ধন্যবাদ দেওয়ার সৌজন্যতাটুকু দেখান না এ দেশের ভদ্রলোকেরা। অথচ আগে যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং থাকত, তখন এঁরা ঘাম ঝরিয়ে মেদ ঝরানোর আনন্দ পেতেন। সব গৃহহীন মানুষকে যখন ঘর দেওয়া হচ্ছে, তখন সুধীজনের উচ্ছ্বাস নেই। কিন্তু দু-একটি ঘর ভেঙে গেলে পরিপাটি বাবুদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস! এ রকম উদাহরণ বহু দেখা যায়। অর্জনে অরুচি আর ব্যর্থতা নিয়ে চর্চায় আগ্রহী আমাদের সুশীলসমাজ সেই একই রূপে ফিরে এসেছে। আর ষড়যন্ত্রের চতুর্থ ভাগে আছে সেই আন্তর্জাতিক মহল। যারা বাংলাদেশকে নতজানু, ভিক্ষুক দেখতে চায়। বাংলাদেশ কেন ভালো আছে, কেন বাংলাদেশে উন্নয়নের উৎসব- এ নিয়ে বড় বড় দেশগুলোর ঈর্ষার আঁচ এখন বাংলাদেশ ভালোই টের পাচ্ছে। বাংলাদেশ কেন হাঁটু গেড়ে তাদের সামনে বসে না, এ নিয়ে তাদের অনেক গোস্সা। আর এ রাগের প্রকাশ দেখা যায় মাঝেমধ্যেই। যে দেশ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বছরের পর বছর আশ্রয় দেয় সে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা এক চরম পরিহাস। ’৭৫-এর মতোই ষড়যন্ত্র চারদিক থেকে বাংলাদেশকে ঘিরে ফেলছে। অনেকেই উদ্বিগ্ন। অনেকেই শঙ্কিত। কিন্তু স্বাধীনতার এই দিনে একটি কথা আমার বারবার মনে হয়, ’৭৫-এর বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। শেখ হাসিনা একটি কাজ খুব নিপুণ দক্ষতায় করেছেন, তা হলো বাঙালির ভিতরের শক্তিকে জাগিয়ে দিয়েছেন। এখন মানুষ আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে। নিজেকে বিকশিত করতে চায়। শেখ হাসিনা নিজেকে একক নেতা হিসেবে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশে শেখ হাসিনাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সরকারের ভুল আছে, ব্যর্থতা আছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় কারও কারও আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর আছে। আছে দাম্ভিকতাও। কিন্তু এর বিপরীতে একজন শেখ হাসিনা আছেন। একজন মানবিক মানুষ। যিনি জনগণের কল্যাণের কথাই সারাক্ষণ ভাবেন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার চরম শত্রুটিও জানেন এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। যত দিন তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর হাতেই নিরাপদ বাংলাদেশ। ষড়যন্ত্র উপড়ে তৃণমূলের শক্তিতে জাতির পিতা বিজয় কেতন উড়িয়েছেন। তাঁর নাম-নিশানা যারা মুছে ফেলতে চেয়েছিল তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও শেখ মুজিব অমলিন, উজ্জ্বল, ভাস্বর। তিনিই বিজয়ী বীর। তেমনি শেখ হাসিনাও হারবেন না। এসব ষড়যন্ত্র মাড়িয়ে তিনি বাংলাদেশকে পৌঁছে দেবেন স্বপ্নের সোনালি বন্দরে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।